Durga Puja Celebration
Abahon Logo

শারদীয় দুর্গাপূ​জা উদযা​পন পর্ষ​দ

ফরেস্ট অফিস রোড
মৌলভীবা​জার - ৩২০০
বাংলাদেশ

আমাদের কথা...

শরৎকালে যখন সাদা কাশফুল ​আর আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভেসে বেড়ায়, জানান দেয় দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা। শরৎকালে এই পূজা হয় বলে এর নাম শারদীয় দুর্গাপূজা। শরৎকালে দুর্গাপূজার সূচনা হয় মূলত রামায়ণের কাহিনিকে অবলম্বন করে। ত্রেতা যুগে রাক্ষস রাজা রাবণকে বধ ও সীতাকে উদ্ধারের জন্য রামচন্দ্র শরৎকালে (অকালে) দেবী দুর্গার পূজা করেছিলেন। অকালে হয়েছিল বলেই এর আরেক নাম অকালবোধন।

আবাহন দুর্গা পূজা সংগঠনটি ১৯৭৯ সালে গঠিত হয়েছিল। ​সংগঠনটি ​বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার ফরেস্ট অফিস রোডে অবস্থিত। আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য হল সারা বছর ধরে বাঙালি হিন্দু সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় দুর্গা পূজা অনুষ্ঠানের প্রচার ও উদযাপন করা এবং আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য ধর্মের সমৃদ্ধ, রঙিন এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধরে রাখা।

আবাহনের এই দুর্গাপূজা আয়োজনে যোগদান করুন এবং সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করুন এবং আসুন আমরা আবাহন দুর্গা পূজা সমিতিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ যুগান্তকারী সংস্থা হিসাবে গড়ে তুলি, যা বাংলাদেশের বাঙালির মানসিক ও সাংস্কৃতিক প্রয়োজন মেটাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

জগজ্জননী দেবী দুর্গার আগমনে আমাদের সবার দুঃখ, কষ্ট, হিংসা, দ্বেষ দূর হোক। পরাজিত হোক সব অশুভ শক্তির। সবার দেহ ও মনে ছড়িয়ে পড়ুক পবিত্রতা। সবখানে ছড়িয়ে পড়ুক শান্তি ও সুখের বারতা। সত্য-সুন্দরের আলোয় আলোকিত হোক পৃথিবী। এই হোক আমাদের সবার কামনা।

দুর্গাপূজা - ২০২৬ সময়নির্ঘণ্ট

Devi Durga

পূজার সময়সূচী

দুর্গাপূজার পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র

যোগাযোগ

ঠিকানা

ফরেস্ট অফিস রোড, মৌলভীবাজার - ৩২০০
বাংলাদেশ

দেবী দুর্গা ও দুর্গাপূজা বৃত্তান্ত

দুর্গাপূজা সমগ্র হিন্দুসমাজের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। আশ্বিন এবং চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের তিথিতে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়। আশ্বিন মাসের দুর্গাপূজা শারদীয়া দুর্গাপূজা এবং চৈত্র মাসের দুর্গাপূজা বাসন্তী পূজা নামে পরিচিত। শারদীয়া দুর্গাপূজার জনপ্রিয়তা বেশি, তাই এই পূজা বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল সহ বিশ্বের একাধিক রাষ্ট্রে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।

সাধারণত আশ্বিন মাসে বা অনেক সময় কার্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের ষষ্ঠী তিথি থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত শারদীয়া দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা থাকে। এই পাঁচটি দিন যথাক্রমে “দুর্গাষষ্ঠী”, “মহাসপ্তমী”, “মহাষ্টমী”, “মহানবমী” ও “বিজয়াদশমী” নামে পরিচিত।

মা দুর্গার বিভিন্ন নাম

দুর্গা পৌরাণিক দেবতা।তাঁকে আদ্যাশক্তি, মহামায়া, শিবানী, ভবানী, দশভুজা, সিংহবাহনা ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়।দুর্গ বা দুর্গম নামক দৈত্যকে বধ করেন বলে তাঁর নাম হয় দুর্গা। জীবের দুর্গতি নাশ করেন বলেও তাঁকে দুর্গা বলা হয়।

মা দুর্গার অকালবোধন

শারদীয়া দুর্গাপূজাকে “অকালবোধন” বলা হয়। কালিকা পুরাণ ও বৃহদ্ধর্ম পুরাণ অনুসারে, রাম ও রাবণের যুদ্ধের সময় শরৎকালে মা দুর্গাকে পূজা করা হয়েছিল। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, শরৎকালে দেবতারা ঘুমিয়ে থাকেন। তাই এই সময়টি তাঁদের পূজা যথাযথ সময় নয়। অকালের পূজা বলে তাই এই পূজার নাম হয় “অকালবোধন”।

দুর্গার বাহন সিংহ

শ্রীশ্রীচণ্ডী-তে সিংহকে “মহাসিংহ”, “বাহনকেשরী”, “ধূতসট” ইত্যাদি বিশেষণে ভূষিত করা হয়েছে। দুর্গাপূজার সময় সিংহকেও বিশেষভাবে পূজা করা হয়। মহিষাসুর অসুর, অর্থাৎ দেবদ্রোহী। তাই দেবীপ্রতিমায় দেবীর পদতলে দলিত এই অসুর ‘সু’ এবং ‘কু’-এর মধ্যকার চিরকালীন দ্বন্দে অশুভ শক্তির উপর শুভশক্তির বিজয়ের প্রতীক।

দেবতাদের দূর্গাপূজা

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে কৃষ্ণকে দূর্গাপূজার প্রবর্তক বলা হয়। এখানে বলা হয় সৃষ্টির প্রথমে কৃষ্ণ বৈকুন্ঠে প্রথম দূর্গাপুজা করেন। এরপর ব্রহ্মা মধু ও কৈটভ নামে দুই অসুর বধের জন্য দ্বিতীয় দুর্গাপূজা করেছিলেন। শিব ত্রিপুর নামে এক অসুরকে বধ করার তৃতীয় দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। ইন্দ্র দুর্বাসা মুনির অভিশাপে লক্ষীকে হারিয়ে চতুর্থ দুর্গাপুজা করেন। এরপর থেকে মর্তলোকে দুর্গাপূজা করা হচ্ছে। শাক্তধর্মের ধর্মগ্রন্থ দেবীভাগবত পুরাণ বর্ণিত আছে ব্রহ্মার মানসপুত্র মনু ক্ষীরোদসাগরের তীরে দূর্গার মাটির মুর্তি তৈরী করে পূজা করেন। দেবী দুর্গা সন্তুষ্ট হয়ে মনুকে সন্তান লাভের বর দেন এবং তার রাজ্যশাসনের পথ পরিষ্কার করেন। শ্রীশ্রীচন্ডী বা দেবীমাহাত্ম্যম-এ দুর্গা ও দুর্গাপুজাকে কেন্দ্র্র করে কয়েকটি পৌরানিক গল্প প্রচলিত আছে। প্রত্যেকটি গল্পে দুর্গাই কেন্দ্রীয় চরিত্র। গল্পগুলি রাজা সুরথের গল্প, মধুকৈটভের গল্প, মহিষাসুরের গল্প। এ তিনটি গল্পের মধ্যে মূলত: মহিষাসুর বধ কাহিনীটি জনপ্রিয়। এখানে মহিষাসুর যুদ্ধ করে দেবতাদের পরাজিত করে স্বর্গের অধিকার কেড়ে নেয়। বিষ্ণু, শিব এ কারণে ক্রোধান্বিত হলে তাদের মুখমন্ডল থেকে যে মহাতেজ নির্গত হয় তা হিমালয়ে ঋষি কাত্যায়নের আশ্রমে একত্রিত হয়ে নারীমূর্তির সৃষ্টি হয় যা কাত্যায়নী পূজা নামে অভিহিত হয়। “মূর্তিতত্ত্ব” বাংলায় দেবী দুর্গার যে মূর্তিটি সচরাচর দেখা যায় সেটি পরিবারসমন্বিতা বা সপরিবার দুর্গার মূর্তি। এই মূর্তির মধ্যস্থলে দেবী দুর্গা সিংহবাহিনী ও মহিষাসুরমর্দিনী, তাঁর পদতলে ত্রিশুলবিদ্ধ মহিষাসুর, মুকুটের উপরে শিবের ছোট মুখ, দেবীর ডানপাশে উপরে দেবী লক্ষ্মী ও নিচে গণেশ, বামপাশে উপরে দেবী সরস্বতী ও নিচে কার্তিক। কলকাতায় সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার ১৬১০ সালে এই সপরিবার দুর্গার প্রচলন করেন । তাঁরা কার্তিকের রূপ দেন জমিদারপুত্রের, যা তৎপূর্ব ছিল সম্রাট সমুদ্রগুপ্তের আদলে যুদ্ধের দেবতা রূপে । এছাড়াও বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর সংলগ্ন অঞ্চলে দেবী দুর্গা এক বিশেষ মূর্তি দেখা যায়। সেখানে দেবীর ডানপাশে উপরে গণেশ ও নিচে লক্ষ্মী, বামে উপরে কার্তিক ও নিচে সরস্বতী এবং কাঠামোর উপরে নন্দী-ভৃঙ্গীসহ বৃষভবাহন শিব ও দুইপাশে দেবীর দুই সখী জয়া ও বিজয়া অবস্থান করেন।

গণেশ কার্যসিদ্ধির দেবতা

হিন্দু পুরাণের নিয়ম অনুসারে, অন্যান্য দেবতার আগে গণেশের পূজা করতে হয়। গণেশের পূজা আগে না করে অন্য কোনো দেবতার পূজা করা শাস্ত্রে নিষিদ্ধ। গণেশের বাহন মূষিক বা ইঁদুর। ইঁদুর মায়া ও অষ্টপাশ ছেদনের প্রতীক। “লক্ষ্মী” লক্ষ্মী শ্রী, সমৃদ্ধি, বিকাশ ও অভ্যুদয়ের প্রতীক। শুধু ধনৈশ্বর্যই নয়, লক্ষ্মী চরিত্রধনেরও প্রতীক। লক্ষ্মীর বাহন পেচক বা প্যাঁচা। “সরস্বতী”সরস্বতী বাণীরূপিণী বাগদেবী, তিনি জ্ঞানশক্তির প্রতীক। দেবীর হাতে পুস্তক ও বীণা। পুস্তক বেদ শব্দব্রহ্ম। বীণা সুরছন্দের প্রতীক নাদব্রহ্ম। শুদ্ধ সত্ত্বগুণের পূর্তি, তাই সর্বশুক্লা। শ্বেতবর্ণটি প্রকাশাত্মক। সরস্বতী শুদ্ধ জ্ঞানময়ী প্রকাশস্বরূপা। জ্ঞানের সাধক হইতে হইলে সাধককে হইতে হইবে দেহে মনে প্রাণে শুভ্র-শুচি। সরস্বতীর বাহন হংস। হংস হিন্দুদের নিকট একটি পবিত্র প্রতীক। “কার্তিক” দেবসেনাপতি কার্তিক সৌন্দর্য ও শৌর্যবীর্যের প্রতীক। যুদ্ধে শৌর্য-বীর্য প্রদর্শন একান্ত প্রয়োজনীয়। তাই সাধক-জীবনে এবং ব্যবহারিক জীবনে কার্তিককে প্রসন্ন করতে পারলে শৌর্য-বীর্য আমাদের করতলগত হয়। কার্তিকেয়ের বাহন ময়ূর। সৌন্দর্য ও শৌর্য – কার্তিকের এই দুই বৈশিষ্ট্যই তাঁর বাহন ময়ূরের মধ্যে বিদ্যমান।

আর্কাইভ